Chakri Seba

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু || President of Bangladesh Md. Sahabuddin Ahmed Chuppu

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হলেন মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু (Next President of Bangladesh Md. Sahabuddin Ahmed Chuppu) :

মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু বাংলাদেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে নির্বাচিত হন।  তিনি পেশায় একজন আইনজীবী,সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) এর সাবেক কমিশনার। ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাধীন  বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ প্রার্থী রূপে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ নির্বাচনে অন্য কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেনি। এজন্য প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই পূর্বক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু ২৩ এপ্রিল,  ২০২৩ তারিখে শপথ গ্রহণ করবেন। 

নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুর  (President of Bangladesh 2023) ব্যক্তিগত জীবনী একনজরে জেনে নিন:

১৯৪৯ সালের ১০ ই ডিসেম্বর   মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু  বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাবনা জেলা সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হলো শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতার নাম খায়রুন্নেসা। ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর মো: সাহাবুদ্দিন, রেবেকা সুলতানার সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। তাদের একমাত্র সন্তানের নাম মো. আরশাদ আদনান (রনি)।

বর্তমানে তিনি বঙ্গভবনে ওঠার আগে গুলশানের বাসায় থাকবেন । একারণে গুলশানের বাসভবনের সামনে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা। 

কেমন ছিল রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুর প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন?

মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত) বিএসসি পাস করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৫ সালেপাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুর কর্মজীবন সম্পর্কে :

 রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ছিলেন।তিনি ১৯৮০ সাল থেকে দুই বছর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’তে সাংবাদিকতা করেন। পরে  তিনি যোগ দেন আইন পেশায়।  তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন-এর মহাসচিব নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি যথাক্রমে যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে। পরবর্তীতে তিনি ২০০৬ সালে অবসরে যান।

সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন ১৯৯৯ সালে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট দলের সদস্য হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলন’-এ যোগদানের জন্য চীনের রাজধানী বেইজিংসহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন সেমিনারে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড সফর করেন। জাতিসংঘের অর্থায়নে এই সফর অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সফরে সংসদ সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ বেসামরিক আমলারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা তদন্তের জন্য তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান (সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদমর্যাদায়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কারণ ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত তাদের দাখিলকৃত প্রতিবেদন সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করে।

তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারিক কাজের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীতে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক উত্থাপিত পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তিনি অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তার প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডার আদালত কর্তৃক সমর্থিত হয়। তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পার্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেডের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুর রাজনৈতিক জীবন :

ছাত্রজীবনে মো: সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ২২তম জাতীয় পরিষদে  নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে খালি থাকা প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি রাজনীতিবিদ ও বিচারক হিসেবেই বেশী পরিচিতি লাভ করেন।

Md. Sahabuddin Ahmed Chuppu
Md. Sahabuddin Ahmed Chuppu

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু:

মো: সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল ভারতে যান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের পাবনা জেলার সভাপতি হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার পতাকার উত্তোলনকারী। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তাকে  কারাবরণ করতে হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৮-৮২ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

অথাৎ বর্তমান নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি রাজনীতিবিদের পাশাপাশি ছিলেন একজন সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা।

সম্প্রতি ২০২০ সালে মো: সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পুর সম্মানে পাবনা পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত একটি উদ্যানের নামকরণ করা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক’।

Leave a Comment