সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত এবং শীর্ষে থাকা কয়েকটি যোগাযোগ মাধ্যম হল ফেইসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম, টুইটার। তবে এই সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও আরো অনেক গুলো ভিডিও চ্যাটিং এপপ্স আছে। কিন্তু এর মধ্যে ফেইসবুক একটি অন্যতম এবং বেশ জনপ্রিয় একটি যোগাযোগের মাধ্যম। এই ফেইসবুকে আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রায় 3 কোটিরও বেশি। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় সকলেরই বিশাল দৃষ্টি বা নজর থাকে ফেইসবুকের উপর।
ফেসবুক আইডি হ্যাক হবার খবর আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, মাঝে মাঝে শোনা যায় ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পর হ্যাকাররা বিভিন্ন ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে শুরু করে কিডন্যাপ, ব্ল্যাকমেইল, এমনকি বিভিন্ন মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। তাছাড়াও ফেসবুক আইডি হ্যাক এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনৈতিক খবর নিউজ প্রকাশ করে যার মাধ্যমে আপনার জীবন হয়ে উঠতে পারে শংকিত। ফেইসবুক ব্যবহার করা এত সহজ না আবার অনেকটা সহজও। যদি সকল বিষয়গুলো জানা থাকে তাহলে এটি অত্যন্ত সহজ একটি বিষয়। মূলত আপনার নিজের কিছু অসতর্কতা খামখেয়ালীপনা এবং না বোঝার কারণে আপনার ফেসবুক আইডিটি হ্যাক / Facebook ID Hack হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
তবে শুরুতেই বলব এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমরা আজকে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো বা কৌশল গুলো জানার চেষ্টা করব বা আপনাদেরকে শেয়ার করবো যেগুলো জানা থাকলে আপনাদের আইডিটি সংরক্ষিত থাকবে । আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন আর ,কখনই আপনার আইডি হ্যাক হবে না :
একটু ভিন্ন রকমের পাসওয়ার্ড (Password) ব্যবহার করুন :
অনেকেই তাদের পাসওয়ার্ডটি সহজে মনে রাখার জন্য এবং তাড়াহুড়ো করে একটি সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। যেমন, 123456 বা 11223344 এমন কিছু সংখ্যা বা নিজের মোবাইল নাম্বার। এই টাইপের পাসওয়ার্ড গুলো কোন ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। কেননা হ্যাকাররা যদি ম্যানুয়ালি আপনার বিষয়টিকে নিয়ে সার্চ করে বার ট্রাই করে তাহলে এ পাসওয়ার্ড গুলো সহজেই বেরিয়ে আসে বা জানতে পারে । তাই শুধুমাত্র নাম্বার ব্যবহার করে কখনোই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। পাসওয়ার্ড দিবেন বিভিন্ন সংখ্যা বা স্পেশাল ক্যারেক্টার দিয়ে। যেমন, বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, বিভিন্ন অ্যারো চিহ্ন,স্পেশাল ক্যারেক্টার (@, $ etc.), সংখ্যা এ সকল কিছু সমন্বয়ে একটি কঠিন বা ভারী পাসওয়ার্ড তৈরি করবেন। যথা, ProjuktiKotha156@#&f1 এমন একটি কঠিন পাসওয়ার্ড হতে পারে। এ ধরনের পাসওয়ার্ড হ্যাকার রা খুব সহজে বের করতে বা ম্যাচ করতে পারে না। আর কখনোই কি-বোর্ডের সিরিয়াল অনুযায়ী আপনি পাসওয়ার্ড দেবেন না কারণ বিভিন্ন পাসওয়ার্ড জেনারেটর সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনেকেই পাসওয়ার্ড পাওয়ার জন্য ট্রাই করতে পারে ।
ফেসবুক (Facebook) আইডিতে ইমেইল (Email) আইডি ব্যবহার :
বিশেষত অনেকেরই ফেসবুক আইডিতে ইমেইল আইডি বা একাউন্ট ব্যবহার করেন না এবং অনেকেরই যোগ করা থাকে না। তাই বেশিরভাগ একাউন্টে শুধুমাত্র ফোন নাম্বার ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। তারপর ফোন নাম্বার দিয়ে একাউন্ট ভেরিফাই করে থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যখন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোন ইমেইল ভেরিফিকেশন থাকবে না তখন কোন অযাচিত লোকেশন বা অন্য কেউ যদি আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাক্সিস নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন না। আর সে জন্যই আপনার একাউন্টে যদি ইমেইল দ্বারা ভেরিফিকেশন করা থাকে ,তাহলে কেউ যদি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করে তাহলে আপনার ইমেইলে একটি মেসেজ চলে আসবে। আর আপনি যদি শুধুমাত্র ফোন নাম্বার দিয়ে একাউন্ট খুলে থাকেন তাহলে আপনার ফোন এ বার্তাটি আসবে না। তাই অবশ্যই বলব ফেসবুক আইডিতে একটি ইমেইল ভেরিফিকেশন করে নিন।
জেনে নিন : ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড কি? ডেবিট ও ক্রেডিট এর মধ্যে সম্পর্ক এবং পার্থক্য কি কি ?
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন (Two-Step Verification) এক্টিভ করে নিন :
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন টি হলো দুই ধাপের একটি নিরাপত্তা। এই বিষয়টি হল কেউ যদি আপনার পাসওয়ার্ডটি জেনেও থাকে তাহলেও আপনার ফেসবুক আইডিতে লগইন করতে পারবে না। কারণ আইডিতে লগইন করতে হলে প্রথমত আপনার ফোন নাম্বারে একটি এসএমএস কোড (SMS Code) চলে আসবে। যেটি লগইন করার জন্য ব্যবহার করতে হবে। আর যে কোন একাউন্টে হ্যাকার থেকে রক্ষা করতে সবথেকে কার্যকরী হলো এই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন এবং এটি যদি করা থাকে তাহলে আপনার আইডিটি সর্বোচ্চ নিরাপদে থাকবে ।
নির্ভরযোগ্য কন্টাক্ট ব্যবহার করুন বা যোগ করুন :
আপনার ফেসবুক আইডিটি নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো কন্টাক্ট ট্রাস্টেড। কন্টাক্ট ট্রাস্টেড হলো এমন একটি বিষয় যা আপনার বিশ্বস্ত বা কাছের মানুষদের আইডির সাথে যোগ করতে পারবেন এতে করে আপনার ফেসবুক আইডিতে কোন প্রকার অনৈতিক বা অযাচিত কার্যকলাপ হয়ে থাকলে সেই ট্রাস্টেড কন্টাক্ট থেকে আপনার আইডিতে এক্সেস নেওয়ার চেষ্টা করবে বা নেওয়া যাবে।
বিভিন্ন ফিশিং লিঙ্ক থেকে বিরত থাকুন :
ফিশিং কি ? অনেকেই এই ফিশিং বিষয়টি জানেনা :- আসলে ফিশিং বিষয়টি হলো কোন একটি লিঙ্ক। যেখানে আপনি ক্লিক করা মাত্রই তাদের কাছে আপনার ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড চলে যায়। আর এই মাধ্যমটি হলো ফেসবুক হ্যাকিং (Facebook Hacking) এর সব থেকে বড় উপায়। তাই বেশিরভাগ ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি এই ফিশিং এর মাধ্যমেই হ্যাক হয়ে যায়। তাই এই বিষয়টিতে সতর্ক থাকুন এবং যেকোন লিংক ভালো করে দেখে তারপর ক্লিক করবেন। তাই ফেসবুক থেকে সবসময় কোন লিংকে ঢোকার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অনেক সতর্ক থাকতে হবে। ফিশিং লিংকগুলো মূলত লোভনীয় আকারের হয়ে থাকে আপনারা ইদানিং খেয়াল করলে দেখবেন কমেন্ট সেকশনে বিভিন্ন লিংক দিয়ে দেয় যেখানে ঢুকে আপনি বিভিন্ন কোর্স করতে পারবেন বা বিকাশ এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন যেকোনো একটি লোভনীয় লিংক। যদি আপনি ক্লিক করেন তাহলে আপনি তাদের সেই প্রতারণার শিকার হবেন। তাই ফিশিং লিঙ্ক থেকে সতর্ক থাকুন। আরও অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। যার মাধ্যমে আপনাকে লগইন করতে হবে বা অনেক সময় আপনার ইমেইল চায় তো সেই ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন ।
তাছাড়াও বিভিন্ন গেমস এবং বিভিন্ন সিক্রেট মেসেজ প্রশ্নের উত্তর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার আপনার আইডি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য Only Me করে রাখুন বা হাইড করে রাখুন :
ফেইসবুক এ ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন আপনার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার, ইমেইল ,জন্ম তারিখ, এই বিষয়গুলো আপনি যদি চান আপনি Only Me করে রাখতে পারেন। আর যদি আপনি চান আপনার শুধু মাত্র আপনার ফ্রেন্ড যারা আছে তারা দেখবে আপনি সেটিও করতে পারেন। কিন্তু সব থেকে নিরাপদ হলো এই বিষয়গুলো আপনি Only Me করে রাখলেই ভালো। এতে করে যে কোন প্রকার হ্যাকাররাই আপনার একাউন্টে কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না এবং আপনার একাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। আপনি আপনার ফেসবুক প্রোফাইলটি কে লক করে রাখবেন।সম্ভব হলে আপনার প্রোফাইল পিকচার টি কেউ লক করে রাখবেন। কারণ অনেক সময় অনেকেই প্রোফাইলে ঢুকে ছবি কালেক্ট করে সে ছবিগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে। তাই আপনার প্রোফাইলটি যদি লক থাকে বা অ্যাকাউন্টটি যদি লক থাকে তাহলে আপনার ফেসবুক আইডিটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকবে।
ফেসবুক আইডি Facebook ID খুলতে সঠিক তথ্য ব্যবহার করুন :
সঠিক তথ্য দিয়ে যদি আপনি ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি Sing UP বা ওপেন না করুন। যেমন, আপনার সঠিক নাম, সঠিক জন্ম তারিখ বা অন্যান্য তথ্য যদি ঠিক ভাবে না ব্যবহার করা হয়। তাহলে কখনো যদি আপনার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয় বা ডিজেবল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনি সেটিকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন না। তাই অবশ্যই ফেসবুক একাউন্ট খোলার জন্য আপনি আপনার সঠিক তথ্য ব্যবহার করুন আপনার জন্ম সনদ পাসপোর্ট জাতীয় পত্রের সাথে মিল রেখে আপনার ফেসবুক আইডি থেকে ওপেন করুন।
জেনে নিন : ফ্রিল্যান্সিং কি? নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবে তার সম্পূর্ণ গাইডলাইন (A TO Z)
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস :
মাঝে মাঝে আপনার ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। এর ফলে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। আর ফেসবুকে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করা সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ। ফেসবুক হল একটি থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট, এখানে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য গুলো তৃতীয় কোনো মাধ্যমে রাখা হয় যার ফলে এটি নিরাপদ নয়।
আশাকরি আমাদের এই টিপস গুলো ফলো করলে আপনার ফেসবুক আইডিটি আর হ্যাক হবে না বা কখনোই ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা নেই ।
তাই আমাদের এই ফেসবুক হ্যাকিং সংক্রান্ত আর্টিকেলটি শেয়ার করলাম আপনাদের কাছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটি শেয়ার করে আপনাদের বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের কে নিরাপদে ফেসবুক চালানোর জন্য সাহায্য বা উদ্বুদ্ধ করবেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ !!