Chakri Seba

Job Interview বা চাকরির ভাইভা এর প্রশ্ন এবং চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল

Job Interview

Job Interview বা চাকরির ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর, সরকারি চাকরির ভাইভা কৌশল এবং সরকারি চাকরির ভাইভা প্রস্তুতি:

আপনি যদি চাকরির ভাইভা জন্য প্রস্ততি নিয়ে থাকে তার মানে হচ্ছে এর আগে যতগুলো ধাপ যেমন, আপনার সিভি পাঠানো এবং লিখিত পরীক্ষার উত্তীর্ণ হওয়া এগুলো সবগুলোতে পাশ করেছে এবার আপনার ইন্টারভিউ দেবার পালা। এক কথায় বলতে গেলে চাকরিদাতা সঙ্গে সরাসরি দেখা করার পালা।

কিন্তু আমাদের সবার আগে যে প্রশ্নটা মাথায় আসে তা হলো চাকরির ভাইভা এর প্রশ্ন ও উত্তর কেমন হবে এবং চাকরি ভাইভা কিভাবে দিতে হয়:

আপনাকে চাকরি পাওয়ার জন্য ইন্টারভিউয়ে অব্যশই পাস করতে হবে। নিচে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:

প্রয়োজনীয় কাগজ-পএ সংগ্রহ (Collection of Necessary Documents for Job Interview):

চাকরির ইন্টারভিউ (Job Interview) বোর্ডে যাওয়ার সময় আপনাকে অব্যশই প্রয়োজনীয় কাগজপএ গুলো সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। এটিকে চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রথম ধাপও বলতে পারেন। কেননা ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশ করার জন্য কাগজপএ গুলো যাচাই করা হবে। সব থেকে ভাল হয় যদি আপনি ইন্টারভিউ এর আগের দিন রাতের মাঝে আপনার সকল প্রয়োজনীর কাগজপত্রগুলো একটি ফাইলে সাজিয়ে রাখেন।

চাকরির ভাইভা বোর্ডে কি ধরনের জামা-কাপড় ও জুতা (What kind of clothes and shoes in the job viva board):

ইন্টারভিউয়ে দেওয়ার আগর আপনাদের মাথায় হাজারটা টেনশন থাকে। আর এসব টেনশন মধ্যে থেকে একটা টেনশন বড় হচ্ছে কি পড়ে যাব এই চিন্তা করছেন। আমি বলব আপনি খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় ও জুতা এগুলো পড়ে যাওয়া খুবই জরুরী কারন আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী আপনার চেহারা সুন্দর হোক বা না হোক ইন্টারভিউতে আপনার পোশাকটা মান সম্মত হওয়া চাই। পোশাকটা পরিচ্ছন্ন হওয়ার পাশাপাশি সময় হালকা রঙের পোশাক বেছে নিবেন যেমন সাদা কিংবা হালকা নীল রঙের পোশাক ইন্টারভিউ এর জন্য সবচেয়ে ভালো। এখন আমি কেন বলছি তার করন এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার আছে এখানে আমাদের মস্তিষ্ক এই রংয়ের পোশাক পরা কাউকে দেখলে মানুষকে মনে করে যে সে খুব গোছানো, পরিচ্ছন্ন এবং একটা স্বচ্ছ মানসিকতার লোক। আর, এটা কিন্তু মনোবিজ্ঞানে প্রমাণিত।

ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশ করার পর সালাম দিবেন (Salute after entering the Job Interview board)

প্রবেশ করার পর ইন্টারভিউ কক্ষে থাকা চাকরিদা পরীক্ষকগণের সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দিবেন। তারপর পরীক্ষকগণ যখন আপনাকে বসতে বলবে তখন বসবেন। বসতে না বললে কিছুক্ষণ তাদের অনুমতির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আর যদি তারা কাছে থেকে অনুমতি না পেলে পরীক্ষকগণের অনুমতি নিয়ে বসবেন।

চাকরির ভাইভা বোর্ডে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন (Look into the eyes and talk on the job viva board):

সব সময় কথা বলবেন যে আপনাকে প্রশ্ন করেছে তার চোখে চোখ রেখে এখনকার চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে সাধারণত একজন না বেশ কয়েকজন থাকে। তবে ইন্টারভিউ যে কজন থাকে তাদের সবাই কিন্তু একটি একটি প্রশ্ন করে যখন যে প্রশ্ন করছে তার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন উওর দিবেন। কিছু কিছু চাকরী প্রাথীগনকে দেখা যায় দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বা অন্য কারো মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে তখন চাকরি দাতাগণ মনে করে আপনার বিশ্বাস এর অভাব। নারী-পুরুষ উভয়ের দিকে তাকিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা খুবই জরুরী।

আঞ্চলিকতা ও অশুদ্ধ উচ্চারণ পরিহার:

ভাইভা বোর্ড এ আঞ্চলিকতা ভাষা অবশ্যই পরিহার করে শুদ্ধ ভাষার প্রশ্নের উত্তর দিবেন এবং পাশাপাশি অশুদ্ধ উচ্চারণও করা যাবে না। আপনার যদি আঞ্চলিকতা ভাষার কথা বলার বদ অভ্যাস থাকে তাহলে আপনি আয়নার সামনে দাড়িয়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার অভ্যাস করতে পারেন। এছাড়া, প্রয়োজনে অনুযায়ী আপনি বিভিন্ন আবৃত্তি কর্মশালায় অংশগ্রহণ এবং বাংলা সাহিত্যের বই পড়াতে পারেন।

নিজের সম্পর্কে বলা (Talking about yourself in Job Interview):

চাকরি শুরুটাই হয় এভাবে আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন তখন বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী ভুল করে বলেন তার নাম, বাবার নাম কি এবং সে কোথায় পড়াশোনা করেছে এ গুলোর বিষয়ে। কিন্তু এগুলো আপনার সিভিতে উল্লেখ রয়েছে তাই এগুলো না বলে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, আপনাকে চাকরি দিলে ঐ প্রতিষ্ঠান কিভাবে লাভবান হবে এবং কিভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন এই বিষয়ে আপনার গুন গুলো উল্লেখ করা।

নিজের নাম, জন্মস্থান এবং সাবজেক্টে সম্পর্কে ধারণা:

আপনার নাম এর অর্থ এবং আপনার নামের বিখ্যাত মানুষ গুলোর সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা রাখবেন। তাছাড়া আপনার জন্মস্থান সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানা। যেমন, জন্মস্থান এর নামকরণ, ইতিহাস, আয়তন, জনসংখ্যা ও ঐ স্থানের বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিচয় ইত্যাদি এসব বিষয়ে মুখস্থ জ্ঞান রাখতে হবে।
তারপর আপনি যে বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করছেন ঐ বিষয়রে উপর ভালো জ্ঞান রাখা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । কেননা, আপনি যে বিষয় নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স করছেন তা যদি নিজেই ভাল না জানেন তবে এটা আপনার একটি বড় ভুল।

চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে সম্পর্কে জানা (Know about Employer Organization):-

যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যাচ্ছে সে প্রতিষ্ঠানে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানা এটা ইন্টারভিউর জন্য একটা বড় প্লাস পয়েন্ট। এখন সাধারণত সব কোম্পানির ওয়েবসাইট থাকে। আপনি ওয়েবসাইটে ঢুকে ওই কোম্পানির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখবেন। তবে আরো ভালো হয় যদি আপনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা। আর আপনি যখন এই তথ্য গুলো জানবেন আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।

উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে ঘাবড়ানো যাবে না:

চাকরির ভাইভা বোর্ডে কিছুতেই ঘাবড়াবেন না। ভালো করে প্রশ্ন শুনে উপস্থিত বুদ্ধি ব্যবহার করে ধীরে সুস্থে প্রশ্নের উত্তর দিন। আর প্রশ্ন শুনে খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা পরীক্ষকদেরকে বুঝতে দিবেন না। মাঝে মাঝে অনেকে ঘাবড়ে গিয়ে আবােল তাবােল প্রশ্ন শুনের উত্তর দেন। তবে ভাইভা পরীক্ষায় উত্তর দেওয়ার সময় খুব কম থাকে প্রশ্ন শুনে সাথে সাথে বিচক্ষণতার সাথে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এক্ষেত্রে উপস্থিত বুদ্ধি কে কাজে লাগাগিয়ে যতটা সম্ভব সঠিক উত্তর দিন।

মুদ্রাদোষ পরিহার এবং নিজেকে সবজান্তা ভাব যাবে না:

আপনি সব জানেন এমনটা ভাইভা বোর্ড এ ভাব যাবে না। নিজেকে সবজান্তা হিসেবে প্রমাণ করতে ভুলেও যাবেন না। সৌজন্য সহকারে প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের উত্তর দিবেন। আমাদের অনেকের বিভিন্ন রকমের মুদ্রাদোষ বা বদভ্যাস থাকে। যেমন, চেয়ারে বসে পা-নাচানাে, একই কথা বারবার বলা এবং পেন্সিল-কলম ইত্যাদি নিয়ে খেলা করা ইত্যাদি। আপনাকে অবশ্যই এসব মুদ্রাদোষ বা বদভ্যাস পরিহার করতে হবে।

আত্মবিশ্বাস এর সাথে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া (Answering questions with confidence in Job Interview)

আপনার প্রশ্নের উত্তরে এ আত্মবিশ্বাশী ও অটল থাকতে হবে। আপনাকে কনফিউশনে ফেলার জন্য চাকরিদাতা ভিন্ন প্রশ্ন করতে পারে। তাই নিজের বক্তব্যে স্থির ও অটল থাকা বাঞ্ছনীয়।

প্রশ্নে রাগান্বিত হওয়া যাবে না:

পরীক্ষক আপনাকে কটাক্ষ করেও কিছু প্রশ্ন করতে পারেন আপনাকে রাগান্বিত করার জন্য কিন্তু প্রশ্নে শুনে রাগান্বিত হওয়া যাবে না। তখন মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এতে আপনার সংযম আপনার ব্যাক্তিত্বকে প্রকাশ করবে।

উক্ত পদ আপনি কেন গ্রহণযোগ্য:

আপনি যে পদে চাকরি করতে চাচ্ছেন সে পদটি তে আপনি কেন গ্রহণযোগ্য বা আপনকে কেন নেওয়া উচিত এই প্রশ্নটি প্রায় অধিকাংশ ভাইভায় করা হয়ে থাকে। তাই উক্ত পদে পরীক্ষা দেয়ার আগে সম্ভাব্য এবং যুক্তিযুক্ত একটি ব্যাখ্যা আগে থেকে প্রস্তুত করে যাবেন। সরকারী চাকরি বা বেসরকারি চাকরি সকল ক্ষেত্রেই এই ধরণের প্রশ্ন নির্বাচকরা করে থাকে।

বর্তমান সময় সম্পর্কে ধারণা:

বর্তমান সময়ে কি কি ঘটনা ঘটেছে তা সম্পর্কে ধারণা রাখা খুব জরুরি। কারণ, অনেক সময় ভাইভা বোর্ডে বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করে থাকেন। দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আপনি দেশ ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে কতটা সচেতন এটি সম্পর্কে যাচাই করার মাধ্যম এটি। তাই সব সময় নিজেকে বর্তমান সময়ের সাথে আপডেট রাখুন।

মেন্টাল গেম খেলার পালাঃ

এখন বেশিরভাগ চাকরির ইন্টারভিউতে একেবারে শেষে দিকে চাকরিপ্রার্থীকে একটা প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। প্রশ্ন করার সুযোগ পাওয়া টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা, প্রশ্নের উত্তরে আপনি একটা মেন্টাল গেম খেলতে পারেন। তখন আপনি বলতে পারেন আমি যদি আপনাদের এই প্রতিষ্ঠান চাকরিটা পেয়ে যায় তাহলে আমি কিভাবে বুঝব যে আমি আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিনা। অথাং আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কাজের মূল্যায়ন পদ্ধতি টা কি। বছরের শেষে নাকি প্রতি মাসে কাজের একটা মূল্যায়ন করা হয়। এতে করে আপনাকে এই উত্তরটা দেয়ার জন্য আপনার চাকরিদাতাকে কি কিভাবে হবে সেটা চিন্তা করে নিতে হবে যে আপনি অলরেডি তারা একজন তার টিমের মেম্বার। আপনি ভালো কাজ করছেন এখন আপনাকে সেটা বোঝানোর জন্য আপনাকে উনি টিমের সদস্য হিসেবে ভাবলেন। আর এই বিষয়টি আপনাকে চাকরি পাবার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দিবে তাছাড়া আপনি তো বলছেন যে আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনি ভালো
কাজ করছেন।

আপনার দুর্বলতা কি:

প্রায় অধিকাংশ ভাইভায় জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে আপনার দুর্বলতা গুলো কি কি। তখন খুব সাবধানতার সাথে এই প্রশ্নটা উত্তর দিবেন। যেমন, আমার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে হিসাব বিজ্ঞান, তবে প্যাশনের ফিল্ড কম্পিউটার। এটি নিয়ে মাঝেমধ্যে একটু সমস্যায় পড়ি আমি। তবে আমি চেষ্টা করছি এখন এটা ঠিক করে নেওয়ার জন্য। এই ধরণের উত্তর দিবেন।

আগামী পাঁচ বা দশ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

ভাইভা বোর্ডে এই কমন একটা প্রশ্নটি খুব বেশি করা হয়। আপনি কতটা দূরদর্শী তা যাচাই করতে এই প্রশ্ন করা হয়। তখন আপনি বলতে পারেন যে ৫ বা ১০ বছর পর পদ্দোন্নতির মাধ্যমে কোম্পানির উচ্চপদে আপনি নিজেকে দেখতে চান অথবা আপনার ক্যারিয়ার যদি বিশেষ কোন গোল থেকে থাকে তাহলে সেটিও শেয়ার করতে পারেন।

শেষ কথা ও আমাদের প্রত্যাশা:

চাকরি ভাইভা বোর্ডে (Job Interview) এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে উত্তর করলে ভাইভা অথবা ইন্টারভিউ বোর্ডে পরীক্ষককে ইম্প্রেস করতে পারবেন। আর, ভাইভা বোর্ডে পরীক্ষককে ইম্প্রেস করে বা দারুন পারফরম্যান্সের মাধ্যমে পছন্দের চাকরিটা নিন, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Comment